মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা শক্তিশালী জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। তাই ইসলাম বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। জাহেলি আরবরা যে পৃথিবীর সর্বকালীন ইতিহাসের বর্বর অভিধা পেয়েছিল, তা ওই মানসিক স্বাস্থ্যহীনতার কারণেই।
জড়বাদী চিন্তা-চেতনা আর আকিদা-বিশ্বাস তাদের মানবিক বোধকে সম্পূর্ণ বিকল করে দিয়ে পাশবিক শক্তিকে এতটাই উসকে দিয়েছিল যে তারা ঐতিহাসিকভাবে বর্বর খেতাব পেয়েছে। জড়বাদ বীভৎসরূপে প্রকাশ পায় ভোগবাদিতার মাধ্যমে। ভোগের নেশা যখন কোনো মানুষের মধ্যে প্রবল হয়, তখন তার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেতে থাকে। সে উন্মাদের মতো আচরণ করতে থাকে। অন্যকে চুষে, চিবিয়ে, দলিয়ে, পিষিয়ে, নিঃশেষ করে হলেও নিজের কার্যসিদ্ধি করাই তার কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। ফলে তার তাণ্ডবলীলা গোটা সমাজকে অশান্ত করে তোলে।
জাহেলি যুগে আরব সমাজের অবস্থা হয়েছিল তেমনই। আমরাও বা কম যাই কিসে! আমরা দেখেছি মদ্যপ মন্ত্রীপুত্রের আগ্নেয়াস্ত্রের টার্গেট হয়ে নিরীহ পথচারীর করুণ মৃত্যু। দেখেছি আইন প্রণেতা-সংসদ সদস্যের ছোড়া বুলেটে অবুঝ শিশুকে বিদ্ধ হতে। বানভাসি, ঝুপড়িবাসী, ছিন্নমূল অসহায় মানুষের জীবন রক্ষায় আসা বিদেশি সাহায্যের টিন চুরি, গম চুরি, ওষুধ চুরি ইত্যাদির কথা আর নাই বললাম। এসব আর কিছুই নয়, কেবল মানসিক স্বাস্থ্যহীনতারই কুফল। জড়বাদী ধ্যান-ধারণা অপরিহার্য পরিণতি। ভোগবাদী মানসিকতার প্রাপ্য প্রায়শ্চিত্ত।
শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বীনি মিশনের প্রথম এবং প্রধান কাজ ছিল মানবজাতিকে মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলা। আর সে জন্যই মহানবী (সা.)-এর নবুয়তি জীবনের প্রথম এক যুগেরও বেশি সময় কেটে গেছে আরবদের ভোগের মোহমুক্ত করতে। জড়বাদী চিন্তা-চেতনার কবল থেকে তাদের রক্ষা করতে। আত্মকেন্দ্রিকতার ঊর্ধ্বে তুলে মুক্তবুদ্ধি আর সুস্থ বিবেকের সঙ্গে যুক্ত করতে। মদিনার জীবনে তাই অনুশাসনিক ভার আরোপ করে তাদের বুদ্ধিমুক্তির পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়নি। ইসলাম কখনো জোরপূর্বক তার অনুশাসন কারো ওপর চাপিয়ে দেয়নি। ইসলাম সব সময় মুক্তচিন্তা আর শুভবুদ্ধিকে উৎসাহী করেছে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য। ইসলাম শুধু পথ দেখিয়েছে অনন্ত-অসীমের সঙ্গে সংযোগের। ইরশাদ হয়েছে, ‘ওরা কি দেখে না, উট কিভাবে সৃজিত হলো? আকাশ কিভাবে উন্নীত হলো? পাহাড় কেমনে প্রোথিত হলো? আর জমিন কিভাবে সমতল হলো? তুমি তো কেবল একজন উপদেশদাতা, সুতরাং তুমি উপদেশ দিয়ে যাও। তুমি তো তাদের কর্মনিয়ন্ত্রক নও।’ (সুরা আল-গাশিয়াহ : ১৭-২২)
মানুষ যখন মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে, তার ভাবনা যখন সৃষ্টির বিশালতায় বিলীন হয়ে যায়, তখন মহাসত্য তার কাছে নিরেট সত্য এবং আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে দেখা দেয়। ইসলাম শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা চায়নি; বরং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার পথে যত অন্তরায় যেমন- মাদকতা, অবাধ যৌনতা, সম্পদের প্রতি সীমাহীন লোভ- সব কিছু কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। মানসিকভাবে সুস্থ মানুষই মহান আল্লাহর খলিফা। মানসিক সুস্থতা হারিয়ে ফেলার অর্থ হলো, মহান আল্লাহর খিলাফতের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলা। আর এই সুস্থ মানুষ যে বিবেক লালন করে, সেটাই মহান আল্লাহর অনুশাসনের আসল চালিকাশক্তি। কারণ মুক্তবুদ্ধির অধিকারী সুস্থ বিবেক কখনো ভুল বা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় ইয়েমেনে প্রশাসক নিয়োগের প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে মহৎ এ কাজের জন্য নির্বাচিত করলেন। মুআজকে প্রেরণের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, মুআজ তোমার কাছে মানুষের এমন অনেক বিষয় নিয়ে আসা হবে, যেগুলো সম্পর্কে তোমাকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। তা তুমি কিসের ভিত্তিতে ফয়সালা করবে? মুআজ (রা.) বললেন, আল্লাহর কিতাবের আলোকে। রাসুল (সা.) আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তাতে যদি তুমি কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে কোনো সমাধান খুঁজে না পাও? মুআজ বললেন, তাহলে রাসুলের সুন্নাতের আলোকে। আল্লাহর রাসুল (সা.) আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, তাতেও যদি না পাও তাহলে? মুআজ বললেন, তাহলে আমি আমার বিবেকের আলোকে সিদ্ধান্ত দেব। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কথায় সন্তুষ্ট হয়ে এভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন, ‘সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর রাসুলের প্রতিনিধিকে এমন বোধ দান করেছেন, যার প্রতি তাঁর রাসুল সন্তুষ্ট।’ (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)
লেখক: মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ
পেশ ইমাম ও খতিব, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ
সূত্রঃ কালবেলা
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ও সেবা পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
হাই-টেক মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল
প্রধান শাখা: ১১৬, মনিপুরীপাড়া (১ নং গেইট), তেজগাঁও, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫.
কেরাণীগঞ্জ শাখা: সারা প্যালেস (পুরাতন সিনেমা হলের পাশে), আটি বাজার, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।০১৭১১-৬৬২৭০৯,
০১৬০২-২৬৮৪০৫,
০১৬০২-২৬৮৪০৬অনলাইনে সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন