মানসিক রোগের সঠিক চিকিৎসা কেন গুরুত্বপূর্ণ

প্রায়শই বলতে শোনা যায় দিন দিন নতুন নতুন রোগ দেখা যাচ্ছে। আসলে বিষয়টি ঠিক ও রকম নয়। রোগগুলো আগে ছিল, কিন্তু জানা ছিল না রোগ নিরূপণ পদ্ধতি। দিন দিন চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আমরা নতুন করে রোগ এবং রোগের কারণ জানতে পারছি।

মানসিক রোগগুলোও এ রকম। মানসিক রোগ নতুন নয়, এ রোগ আগে ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নয়নে এখন প্রায় সব রোগের উন্নত চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে। মানসিক রোগের চিকিৎসা ও এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

আগের অবৈজ্ঞানিক, অপচিকিৎসার পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে সাইকিয়াট্রিস্টের মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। দেশে গড়ে উঠেছে মানসিক হাসপাতাল ক্লিনিক। আশার কথা দেশে অনেক বিশেষজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট বা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ কাজ করে যাচ্ছেন নিরলস। দেশের জনসংখ্যা হিসেবে চাহিদার তুলনায় সাইকিয়াট্রিস্ট অনেক কম।

ফলে এখনো দেশের অনেক জায়গায় মানসিক রোগীরা নানা প্রকার দৈহিক মানসিক নির্যাতনমূলক, অপমান কর অশোভন সব অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। মানসিক রোগ বিষয়ে আমাদের অসচেতনতাও এক কারণ। প্রায় সব পরিবারেই কমবেশ স্বল্পতর বা ঘোরতর মানসিক রোগ রয়েছে।কিন্তু স্রেফ লজ্জা বা সামাজিক কুসংস্কার থেকে অনেকেই চিকিৎসার জন্য আসেন না। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বা মূর্খতা হলো মানসিক রোগী বা পরিবার নিয়ে আমরা ঠাট্টা-তামাসা করি।

আমাদের দেশে প্রচলিত ঘোরতর বা স্বল্পতর মানসিক রোগের কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি:

১) ঝাঁটাপিটা- কবিরাজ বা ভণ্ড ডাক্তার ঝাড়ু দিয়ে রোগীকে অনবরত পেটাতে থাকে।
২) সুই পোড়া- সুই আগুনে গরম করে রোগী বা রোগিণী কানে অথবা স্পর্শকাতর স্থানে ছিদ্র করে দেয়।
৩) লালা পড়া- রোগী সারা গায়ে লালা মেখে দেয়। সাধারণত বয়ঃসন্ধিক্ষণে কিশোরীর হালকা মানসিক সমস্যা হলে ভণ্ড বাবা বা সাধুরা এটা করে।
৪) মরিচ পোড়া-মরিচকে আগুনে পুড়িয়ে নাকে ঢুকিয়ে দেয়।
৫) বস্তা বাঁধা- মানসিক রোগীকে বস্তায় পুরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে।
৬) মুতপড়া- ভণ্ড বাবা নিজের প্রস্রাবকে বোতলে ভরে দিনে তিনবার খেতে দেয়।
৭) ধোঁয়া বান- রোগীকে বদ্ধঘরে ধোঁয়ায় বেঁধে রাখা।
৮) চ্যাংদোলা- রোগীকে নেংটি পরিয়ে চ্যাংদোলা করে পেটাতে থাকা। সাধারণত ভুয়া মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রে ভণ্ড গ্রাম ডাক্তার রা এটা করে।
৯) তেলপড়া- তেলের মধ্যে মরিচ মিশিয়ে গায়ে মাখতে দেয়া।
১০) ডান্ডাবেড়ি পরানো- রোগীকে সারা গায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলে রাখা।
১১) ধর্ষণ-রোগিণীকে নিজের ঘরে বা ডেরাতে আটকে রেখে অলৌকিক আত্মার হাজিরার কথা বলে ভণ্ড বাবারা নিজেরাই রাতের পর রাত ধর্ষণ বা ফিজিক্যাল অ্যাবিউজ করে।
১২) আংটি বা পাথর লাগানো- কিছু কিছু ভণ্ড রয়েছে দুষ্প্রাপ মেটাল বা রেডিও একটিভ ধাতু দ্বারা তৈরি আংটি বা প্রাকৃতিক কিছু রংবেরং পাথরের রহস্যময় ক্ষমতা বলে মানসিক রোগ সেরে যাওয়ার কথা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

সাধারণত স্বল্পতর মানসিক রোগ যেমন হতাশা বিষণ্ণতা উদ্বিগ্নতা এ রকম রোগীকেই তারা টার্গেট এ করে। কঠিন, তরল বায়বীয় ধাতুর তৈরি আংটি দিয়ে রোগ সারালে বা ভাগ্য বদলালে খ্যাতিমান বিজ্ঞানী নিউটন, আইনস্টাইনরা গলায় হাতে পায়ে সারাক্ষণ জ্বলমলে আংটি পরে বসে থাকতেন।

যাহোক আরও কিছু অপচিকিৎসা কথা শোনা যায় যার মধ্যে আছে মাথা মুড়িয়ে দেয়া, গরু-ছাগলের সঙ্গে বেঁধে রাখা, খেতে না দেয়া, ভারি কাজ করানো, গোবর বিস্টা খেতে দেয়া, সহ আরও অনেক কুকর্ম যা ভণ্ড বাবা সাধু কবিরাজরা সবার সামনেই করে থাকে।

এসব চিকিৎসায় কি রোগী আদৌ ভালো হয়? কেবল অশিক্ষিত নয় অনেক উচ্চশিক্ষিতের বদ্ধমূল ধারণা যে এসব দৈহিক নির্যাতনমূলক, অপমান কর অপচিকিৎসায় মানসিক রোগ তাৎক্ষণিক সেরে যায়। আসলে বিষয়টি মোটেই সে রকম না। মূলত এসব নির্যাতন সইতে না পেরে রোগী তাৎক্ষণিকভাবে স্বল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য সাব কনসাস বা আনকনসাস (অজ্ঞান) হয়ে পড়ে থাকে।

তখন ভণ্ডরা সেটাকে দেখিয়ে বলে রোগী গায়ে যা ভূত বা উপরি বাতাস ভর করেছিল এখন সেটা চলে গেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলে না কেন? এ প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর আছে। প্রথমত হলো অজ্ঞতা, অসেচতনতা। এগুলো যে অপচিকিৎসা এটাই অনেকে বিশ্বাস করেন না। মানসিক রোগ ও মানসিক রোগ সম্পর্কে এখনও আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী অন্ধকারে রয়েছেন।

ফলে ভণ্ডরা ব্যবসায় ফাদে ফেলে মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। দ্বিতীয়ত এসব ভণ্ডদের অনেক সময় উপরে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে থাকে যোগাযোগ ও লেনদেন। তাদের রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। দালালচক্র, ও মাদকাসক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ ফলে এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে বা করতে গেলে নানান চাপের মধ্যে পড়তে হয় এমনকি প্রাণনাশের মুখোমুখি হতে হয় অনেককে।

ভুক্তভোগী পরিবার কেন এদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না? যেহেতু ভুক্তভোগী নানারূপ শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির বা অপমানের শিকার হয় তাই লোকলজ্জার ভয়ে এসব আর বলতে যায় না। অনেকে অবশ্য বলেন অভিযোগ করে লাভ হয় না, বরং উল্টোটাই হয়। এ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়?

এসব অপচিকিৎসায় রোগী শারীরিকভাবে নির্যাতিত, ধর্ষিত এমন কি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এসব থেকে রেহাই পেতে হলে এসব ভণ্ড বাবা, সাধু ও তাদের চিকিৎসালয় বা আখড়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। এদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাভোগীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

এমনকি ভণ্ড বাবা বা সাধুদের মানসিক চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। কেননা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ভণ্ড বাবা বা সাধু সন্যাসীরাও ঘোরতর মানসিক বিকারগ্রস্ত। মানসিক রোগ ডায়াবেটিস প্রেশার বা হাঁপানি রোগের মতোই একটা ব্রেইনের রোগ।

ব্রেইনের কিছু নিউরোট্রান্সমিটার এর স্বল্পতা বা আধিক্যের জন্য এটা হয়। সাইকিয়াট্রিস্ট বা ব্রেইন ও মানসিক রোগের ডাক্তার দিয়েই এর চিকিৎসা করতে হয়। ভণ্ড বাবা মা, সাধু সন্যাসী দিয়ে নয়। দেশ অনেক এগিয়েছে। এগিয়েছে চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থা।

সাইকিয়াট্রি সাবজেক্টটি কঠিন হলেও এখন দেশে অনেক ডাক্তার এ সাবজেক্ট এ উচ্চতর পড়াশোনা করতে আগ্রহী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেক বিশেষজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট সারা দেশের মেডিকেল কলেজে রয়েছেন। তবে জনসংখ্যা ও রোগী হিসেবে দেশের জন্য

আরও প্রচুর সাইকিয়াট্রিস্টের প্রয়োজন রয়েছে। যারা আছেন তাদের ওপর রয়েছে প্রচুর চাপ। আসুন মানসিক রোগীকে নির্যাতন বা অবহেলা নয়। অশিক্ষিত মূর্খের মতো মানসিক রোগ নিয়ে লজ্জা, ঠাট্টা-তামাশাও নয়।

লেখক: ডা. মো. সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ও সেবা পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

হাই-টেক মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল

প্রধান শাখা: ১১৬, মনিপুরীপাড়া (১ নং গেইট), তেজগাঁও, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫.
কেরাণীগঞ্জ শাখা: সারা প্যালেস (পুরাতন সিনেমা হলের পাশে), আটি বাজার, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

০১৭১১-৬৬২৭০৯,
০১৬০২-২৬৮৪০৫,
০১৬০২-২৬৮৪০৬

অনলাইনে সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

Main Branch: Hi-Tech Modern Psychiatric Hospital. 116, Monipuripara (1 No Gate), Tejgaon, Farmgate, Dhaka-1215. Keraniganj Branch: Sara Palace (Beside Old Cinema Hall), Ati Bazar, Keraniganj, Dhaka.

Call Us Now at

Call Us Now at

01711-662709, 01602-268405, 01602-268406

Email Us at

Email Us at

modernhospital2014@gmail.com

Twitter
YouTube
LinkedIn
Share
WhatsApp