মোয়াজ্জিম হুসাইনঃ মৃত্যু একটি অবধারিত সত্য। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে। তাই বলে আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে প্রাণ বিসর্জন কোনো মতেই কাম্য নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে আট লাখ লোক আত্মহত্যা করেন। দৈনিক আত্মহত্যা করেন ২ হাজার ১৯০ জন। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন লোক আত্মহত্যা করেন।
বাংলাদেশেও সে সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়। বিবিএসের জরিপ বলছে বাংলাদেশে বছরে আত্মহত্যা করেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ৩৫ জন। আত্মহত্যা সূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। বেসরকারি সংস্থা আঁচলের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাঁদের মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের ৩৪০ এবং কলেজ পর্যায়ে ১০৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।মানুষ ঠিক কেন আত্মহত্যা করেন, এই প্রশ্নের উত্তর ইতালির কবি ও ঔপন্যাসিক সেসার পাভিস দিয়েছেন এভাবে, ‘আত্মহত্যা করার জন্য কারও কারণের অভাব হয় না।’ পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে স্বাভাবিক মৃত্যুকে না মেনে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা ও মানসিক বেদনা ও অর্থনৈতিক দৈন্য বেড়ে গেলে চরম হতাশা কাজ করে। হতাশাই নিজের মধ্যে নেতিবাচক ধারণাগুলো তৈরি করে। একপর্যায়ে মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে। এ ছাড়া ব্যক্তিত্বে সমস্যা, গুরুতর মানসিক রোগ , মাদকাসক্তি, এনজাইটি, ডিপ্রেশন অথবা প্ররোচনা ইত্যাদি কারণেও অনেকে নিজেকে আত্মহুতি দেন।
বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। সাধারণত কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। স্বল্প শিক্ষা, দারিদ্র্য, দাম্পত্য কলহের জেরে অনেকে আত্মহত্যা করেন। এ ছাড়া প্রেম-সম্পর্কিত জটিলতা, আর্থিক অনটন, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব আত্মহত্যার পেছনের অন্যতম কারণ। স্কুল ও কলেজপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ‘অভিমান’। আর উঠতি বয়সে অসতর্কতাবশত যৌন সম্পর্ক, প্রতারিত হওয়া, সেগুলো প্রকাশ হয়ে পড়া, এমনকি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের মতো ঘটনাও ঘটে। লোকলজ্জা, পরিবার-সমাজ এসব বিষয়কে কীভাবে দেখবে, তা ভেবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।
আত্মহত্যার মাধ্যমেই কী এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? একদমই নয়। জীবন সৃষ্টিকর্তার দান করা শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এটিকে জানতে হবে। জীবনের নিগূঢ় অর্থ অনুসন্ধান করতে হবে। সমস্যা জীবনেরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবন চলার পথে সমস্যা নামক বিষয়টির সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ হবে। এটিকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা শিখতে হবে। সর্বদা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। প্রতিটি ধর্মেই আত্মহত্যার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন। নিজেকে জানলে হতাশা, দীনতা, কলহের ভয়াল থাবা কখনো আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
সফলতার মতো ব্যর্থতাকেও মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। পারিবারিক বন্ধনগুলো আরও সুদৃঢ় করতে হবে এবং পরিবারে প্রত্যেকের সঙ্গে গুণগত সময় কাটাতে হবে। মাদকাসক্তি, বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়াসহ সব মানসিক সমস্যা বা রোগের দ্রুত শনাক্ত করা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে আত্মহত্যার মতো বিষয়টিকেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। জীবন একটাই। আসুন বাঁচতে শিখি। ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’—এই হোক আমাদের স্লোগান।
লেখকঃ মোয়াজ্জিম হুসাইন, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ও সেবা পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
হাই-টেক মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল
প্রধান শাখা: ১১৬, মনিপুরীপাড়া (১ নং গেইট), তেজগাঁও, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫.
কেরাণীগঞ্জ শাখা: সারা প্যালেস (পুরাতন সিনেমা হলের পাশে), আটি বাজার, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।০১৭১১-৬৬২৭০৯,
০১৬০২-২৬৮৪০৫,
০১৬০২-২৬৮৪০৬অনলাইনে সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন