বয়স এ ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায় নয়৷ সব বয়সের মানুষই স্ট্রেস থেকে মুক্তি চান৷ মাইন্ডফুলনেস বিশেষজ্ঞ হিসেবে মার্টিনা ফ্রিৎস মনে করেন, ‘‘অনেক মানুষ মনে করেন, যে তাঁরা জীবনে চাপের মুখে রয়েছেন, তাঁদের চালনা করা হচ্ছে৷ মনে হয়, তাঁদের আর কোনো নিজস্ব সত্তা নেই, শুধু মানুষ হিসেবে সচল থাকতে হয়৷ তাঁরা নিজেদের সমাজের চাকা হিসেবে দেখেন৷ নিজেদের জীবনের রাশ হাতে নেবার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না৷’
এই মুহূর্তে ফিরে আসা, নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগ ফিরিয়ে আনা, সচেতনভাবে নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া জরুরি৷ দৈনন্দিন জীবনে বাসন ধোয়া অথবা দাঁত মাজার সময়েও এমনটা করা সম্ভব৷ ভবিষ্যতের কথা না ভেবে শুধু এখনকার অনুভূতিগুলির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে৷ কঠিন পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে অথবা স্ট্রেস কমাতে দৈনন্দিন জীবনের গড্ডলিকা প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ মার্টিনা ফ্রিৎস বলেন, ‘‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু ঘনঘন ঘটে, তাকে অটোপাইলট বলা যায়৷ আমরা ঘুম থেকে উঠি, সকালে একই কাজ সারি৷ স্নান করি, জামাকাপড় পরি, তারপর কাজে বের হই৷ আমাদের নিজস্ব ছন্দ রয়েছে৷ অনেকে প্রবল যানজট পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছান৷ তারপর আবেগের ওঠানামাও রয়েছে৷ কেউ গালিগালাজ করেন৷ অনেক কিছুই বার বার ঘটতে থাকে৷ মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই চক্রে আটকে পড়ে৷”
মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস, ধ্যান ও যোগাসন দৈনন্দিন জীবনের গতি কমাতে পারে৷ জীবনের জাঁতাকল থেকে কয়েক মুহূর্ত মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে৷
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস আজকের জীবনযাত্রার খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। আজকের ব্যস্ত জীবনে সকাল থেকে রাত অবধি মানসিক চাপ বহে বেড়াতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে আপনার স্ট্রেস লেভেলও অনেক বেড়ে যায়। কখনও কাজের চাপে, কখনও চাকরির সমস্যা, কখনও সাংসারিক জীবনে অশান্তির কারণ, কখনও পড়াশুনা রেজাল্ট ভালো না হওয়া, কখনও অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ার ভয়, এই সমস্ত কারণগুলি থেকে। জীবনের যে কোনও স্তরে যে কোনও কারণে আমাদের ঘিরে ধরতে পারে এই অবসাদ। কোনও কোনও সময় এই চাপ বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
স্ট্রেস কেবল আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবনকেই নয় আপনার চারপাশের মানুষকেও প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত স্ট্রেস দূর করার অন্যতম উপায় হ’ল স্ট্রেস বল ব্যবহার করা। আসলে, এই নরম বলটি অবিলম্বে আপনার স্ট্রেস হ্রাস করতে খুব সহায়ক হতে পারে।
বেশি করে পানি পান করুন, স্ট্রেস কমাতে পানি উপকারী। সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠুন। সবার সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন। সময় করে যোগব্যায়াম করুন, এতে টেনশন ও স্ট্রেস দুটোই চলে যায়।
জীবনে কিছুটা স্ট্রেস খারাপ কিছু নয়। তবে অতিমাত্রায় স্ট্রেস থাকলে তা ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। আবার কোনভাবেই যাবতীয় স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা ৮টি মৌলিক পদ্ধতির কথা বলেছেন যার মাধ্যমে স্ট্রেস সামলে ওঠা যায়। এখানে জেনে নিন সেই ৮টি কার্যকর পদ্ধতির কথা।
১. প্রথমেই স্ট্রেস সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো শনাক্ত করতে হবে। আগে থেকে বুঝতে পারলে স্ট্রেস ভর করলেই আমাদের দেহ-মন প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। কাজের ক্ষেত্রে স্ট্রেস সৃষ্টিকারী উপাদান হলো অনির্দিষ্ট চাহিদা, মেটানো যায় না এমন নির্দেশ, কম পাওয়া এবং সামান্য ভুলের বড় খেসারত দেওয়া ইত্যাদি।
২. স্ট্রেসের সময় দেহ যেন খুব দ্রুত সামলে নিতে প্রতিক্রিয়াশীল হয় তার চর্চা করতে হবে। এই অবস্থায় এমনভাবে খাপ খাওয়াতে হবে যেন দেহ-মন স্থির না হওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি চলমান থাকে। এ ক্ষেত্রে স্থিত হতে বড় করে শ্বাস নেওয়ার যে পদ্ধতি বহুল প্রচলিত তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। দেহ ও মনের যত্ন নিলে স্ট্রেস খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। সঠিক সময়ে খাওয়া, ব্যায়াম করা এবং ঘুম দারুণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। দেহ-মন সুস্থ থাকলে সহজেই স্ট্রেসের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যায়।
৪. পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি আমরা। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও নিজের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গোটা বিষয়টি ইতিবাচক আচরণের মধ্য দিয়ে আয়ত্ত করা যায়। স্ট্রেসের সময় নেতিবাচক আচরণ আমাদের জীবনে কেমন প্রভাব ফেলে তা বিবেচনা করতে পারলেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
৫. স্ট্রেসের বড় একটি অংশ ফেলে দেওয়া যায় বিনোদনমূলক কাজের মাধ্যমে। এর জন্যে আগে থেকেই ব্যবস্থা রাখতে হবে আপনাকে। এমনকি অফিসের টেবিলেও এ ব্যবস্থা রাখতে পারেন। স্ট্রেসপূর্ণ কাজের পর গান শোনা বা মজার কোনো খাবার উপভোগ করার মধ্য দিয়ে স্ট্রেস সামলানো যায়।
৬. সহকর্মী বা কাছের মানুষের সঙ্গ স্ট্রেস উৎপন্ন করতে পারে। এর জন্যে বিষাক্ত মানুষের আশ পাশে থাকলেই সর্বনাশ। তাই এ ধরনের মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করুন। অন্যে আচরণ, মন্তব্য, মানসিকতা সহজেই স্ট্রেসে ফেলে দিতে পারে আপনাকে।
৭. ইতিবাচক মানসিকতাকে কাজে পরিণত করার অভ্যাস স্ট্রেস দূর করবে। সুখী ও তৃপ্তিদায়ক কাজ করাতে উৎসাহী হয়ে উঠতে হবে। স্ট্রেসের সময় এগুলোর চর্চা ভালো ফল দেবে। কোন কাজগুলো জীবনের বিশেষ অংশের উন্নতিসাধন করে এবং যথেষ্ট ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে তা শনাক্ত করুন। এগুলোর চর্চা অব্যাহত রাখুন।
৮. প্রাণোচ্ছল থাকতে পারেন এমন দীর্ঘমেয়াদি কাজ হাতে নিন। মেডিটেশন, লেখালেখি, ব্যায়াম ইত্যাদি এসব কাজের তালিকায় আসতে পারে। এর মাধ্যমে স্ট্রেস থেকে দূরে থাকা যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ও সেবা পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
হাই-টেক মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল
প্রধান শাখা:
১১৬, মনিপুরীপাড়া (১ নং গেইট), তেজগাঁও, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫.০১৬০২-২৬৮৪০৫,
০১৬০২-২৬৮৪০৬
কেরাণীগঞ্জ শাখা:
সারা প্যালেস (পুরাতন সিনেমা হলের পাশে), আটি বাজার, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।০১৭১১-৬৬২৭০৯,
০১৭৩০-৩৩৩৭৮৯অনলাইনে সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন