মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পোখাজী গ্রামের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. অনিক খান। গত ৫ আগস্ট বাড়ি থেকে পালিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যোগ দেন তিনি। অনিক ছিলেন পাটুরিয়া ঘাট এলাকায়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে অনিকের চোখের সামনে লাশ হন কয়েকজন। এরপর থেকে রাতে ঘুমাতে পারতেন না অনিক। চোখ বন্ধ করলেই তার সামনে ভেসে উঠত লাশের ছবি। আর তখনই চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে যেতেন তিনি। ক্রমেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। অপরিচিত মানুষ দেখলেই ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় পান তিনি। আচমকা কিছু কানে এলেই ভাবেন গুলির শব্দ। এ অবস্থায় তাকে নেয়া হয় মানিকগঞ্জের বেসরকারি একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২৫ অক্টোবর অনিককে ভর্তি করা হয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে।
অনিকের বাবা সেলিম খান অটোরিকশা চালান। তার একার আয়ে চলে ছয় সদস্যের পরিবার। ছেলের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে এরই মধ্যে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুদানও পাননি।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ২১ দিনের জন্য রিলিজ দিয়েছে। এখনো ওষুধপত্র নিজের টাকাতেই কিনতে হচ্ছে। যেখানে সংসার চালানোই কঠিন, সেখানে ছেলের চিকিৎসার খরচ মেটাতে আরো বেশি হিমশিম খাচ্ছি। সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।’
শুধু অনিক খান নয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভয়াবহতা পর্যবেক্ষণ করে মানসিক ট্রমার শিকার হয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৬ জন। বিশেষায়িত হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, সেখানে এখনো চারজন রোগী চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. মো. তৈয়বুর রহমান বণিক বার্তাকে জানান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি টিম অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কাউন্সেলিং করছে। গত সপ্তাহ থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একটি টিম রোগীদের কাউন্সেলিং শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেবে আরেকটি টিম।
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পাবনা মানসিক হাসপাতালসহ জেলা পর্যায়ের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোয় বেশকিছু রোগী রয়েছেন, যারা অভ্যুত্থানে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন।
ডা. মো. তৈয়বুর রহমানের ধারণা, আন্দোলনে অংশ নিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানো রোগীর সংখ্যা সারা দেশে কয়েক হাজার হবে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট সঠিক সংখ্যা জানতে জরিপ চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
চিকিৎসাসেবার বিষয়ে তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘রোগীদের অবস্থা ভেদে আমরা ব্যবস্থা নিই। প্রাথমিকভাবে বহির্বিভাগে চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং দেয়া হয়। সেজন্য হাসপাতালের ২৪২ নম্বর কক্ষে বিশেষ বহির্বিভাগ সেবা চালু রয়েছে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। এছাড়া গুরুতর রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তীকৃত ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়া ব্যক্তিদের টিকিট, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ দেয়া হয় বিনামূল্যে।’
এদিকে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহে অনেক পরিবারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে রিলিজ পাওয়ার পর অনেক রোগীকে নিজ খরচে ওষুধপত্র কিনতে হচ্ছে। এতে আর্থিক সংকটে পড়েছেন স্বজনরা।
এ বিষয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানো জাহিদুল ইসলামের পরিবার জানায়, হাসপাতাল থেকে সব বিনামূল্যে দেয়া হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু জিনিস কিনতে হয়। এছাড়া ছেলের পেছনে তিনজন মানুষ তিন মাস ধরে সময় দিচ্ছে। সঞ্চিত অর্থ শেষ, এখন আত্মীয়-স্বজনের থেকে ধার করে চলতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আহতদের দেখভাল ও আর্থিক অনুদানের টাকা তুলে দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি হাসপাতালে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দায়িত্বে আছেন আফজালুর রহমান সায়েম। তার ভাষ্য, ‘এখন পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করে সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করব।’
জনস্বার্থে-
হাই-টেক মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল
মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগের অনন্য চিকিৎসা কেন্দ্র
যেকোন তথ্যে ও সিরিয়ালের জন্য যোগাযোগ করুন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ও সেবা পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
হাই-টেক মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল
শাখা-১:
সারা প্যালেস (পুরাতন সিনেমা হলের পাশে), আটি বাজার, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।০১৭১১-৬৬২৭০৯,
০১৭৩০-৩৩৩৭৮৯
শাখা-২:
১১৬, মনিপুরীপাড়া (১ নং গেইট), তেজগাঁও, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫.০১৬০২-২৬৮৪০৫,
০১৬০২-২৬৮৪০৬
অনলাইনে সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন